প্রাচীনকালে এই অলিভ অয়েলকে তরল সোনা হিসেবে গণ্য করা হত৷ অলিভ অয়েল হল আসলে জলপাই ফল থেকে তৈরি এক ধরণের তেল ৷ যা মূলত রান্নায় ব্যবহার করে থাকেন অনেকেই ৷ সরষের তেল এবং সাদা তেলের পাশাপাশি শরীর সম্পর্কে সচেতন যারা তাদের হেঁসেলে ইতিমধ্যেই জায়গা করে নিয়েছে এই অলিভ অয়েল ৷
প্রসঙ্গত, এই অলিভ সবথেকে বেশি জন্মায় পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় ৷ সাধারণত ৮-১৫ মিটার দীর্ঘ হয় এই অলিভ গাছ ৷ পৃথিবীর মধ্যে গ্রীসে সবথেকে বেশি ব্যবহার করা হয় অলিভ অয়েল বলে জানা যায় ৷
তবে বর্তমানে এর গুণাগুণের জন্য অন্যান্য দেশেও এর চাহিদা কিছু কম নয়, কারণ হার্ট অ্য়াটাক, আর্থারাইটিস, স্তন ক্য়ানসার, কোলোরেক্টাল ক্যানসার, জরায়ু ক্য়ানসার থেকে শুরু করে কোষ্ঠ কাঠিন্য়, গলব্লাডারে সমস্যা, মাইগ্রেন-এর সমস্যা প্রভৃতি বিভিন্ন ধরণের রোগ ও অসুবিধার সঙ্গে মোকাবিলায় বা তাদের প্রতিহত করতে অলিভ অয়েল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে
১. ত্বকের জন্য় অলিভ অয়েলের উপকারিতা:
বাজার চলতি বিভিন্ন ক্রিমে অনেক সময় ক্ষতিকারক রাসায়নিকের উপস্থিতির কারণে আপনার অজান্তেই ত্বকের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়৷ অলিভ অয়েল-এর ব্যবহারে ত্বক নানান দিক থেকে সুরক্ষা পেতে পারে৷
অ্য়াকনে বা ব্রণ প্রতিরোধ- ব্রণ বা অ্য়াকনে একটি নিত্যদিনের সমস্য়া হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ দূষণ, ব্য়স্ত জীবনযাত্রা, খাওয়াদাওয়া এবং সেই সঙ্গে নিজের ত্বক এবং শরীরের সঠিক যত্ন না নেওয়ার ফলে এই সমস্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে ৷ কিন্তু জলপাই তেল এই ব্রণর হাত থেকে আপনার ত্বককে বাঁচাতে সাহায্য় করে অনেকটাই ৷
কীভাবে ব্য়বহার করবেন অলিভ অয়েল?
অলিভ অয়েলে কিছুটা লবণ মিশিয়ে নিন ৷
এবার এই মিশ্রণ ত্বকে লাগিয়ে কিছুক্ষণ তা রেখে দিন ৷
পরে তা ইষদুষ্ণ জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ৷
এটি স্ক্রাবারের কাজ করবে ৷
সপ্তাহে এক বা দুই বার এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে ব্রণর প্রকোপ কমতে পারে ৷
ত্বকের ঔজ্জ্বল্য়- ব্য়স্ত জীবনে প্রতিদিন বাইরে বেরিয়ে কাজ করলে ত্বকের আরও বেশি করে যত্ন প্রয়োজন ৷ তাই তার জন্য় সবথেকে সহজ উপায় হল অলিভ অয়েলের ব্য়বহার, যা ত্বকের কোনওরকম ক্ষতি তো করেই না, উপরন্তু তাকে রক্ষা করতে সাহায্য় করে ৷
কিন্তু কীভাবে ব্য়বহার করবেন?
প্রতি রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ভালো করে মুখ পরিষ্কার করে নিন ৷
এবার অলিভ অয়েল একটু নিয়ে মুখে, হাতে, পায়ে আলতো মাসাজ করে নিন ৷
নিয়ম করে এটি করতে পারলে ত্বকের কালচে ভাব দূর হবে এবং সেই সঙ্গে ঔজ্জ্বল্য় ফিরে আসবে ৷
ত্বকে বার্ধক্য়ের ছাপ কমায় – আপনার ত্বক কুঁচকে যাওয়া বা তাতে বার্ধ্যকের ছাপ পড়তে দেয় না এই জলপাই তেল ৷ এর জন্য অনেকেই একটি টোটকা মেনে চলেন, আর তা হল, দু চামচ অলিভ অয়েল-এর সঙ্গে এক চামচ পাতি লেবুর রস, এক চিমটে লবণ মিশিয়ে এই মিশ্রণটি মুখে, হাতে, পায়ে, গলায়, ঘাড়ে লাগিয়ে, হালকা মাসাজ করে তা জল দিয়ে তুলে ফেলতে হবে ৷
ময়েশ্চারাইজার হিসেবে সুরক্ষা প্রদান- এই তেলে থাকা ভিটামিন এ, ই এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ত্বককে সজীব রাখে ৷ সূর্যের অতি-বেগুনি রশ্মির হাত থেকেও আপনার কোমল ত্বককে রক্ষা করে ৷ অনেকেই মনে করেন তৈলাক্ত ত্বকের জন্য় তেল ক্ষতিকারক হতে পারে ৷ কিন্তু অলিভ অয়েল সব ধরণের ত্বকের জন্য়ই উপকারী ৷
মেক আপ তুলতে- একটু আধটু মেক আপ থেকে চড়া মেক আপ যাই করুন, ঘুমোতে যাওয়ার আগে তা অবশ্য়ই তুলে ফেলতে হবে, আর এর জন্য় বাজার চলতি কোনও ক্রিম বা অন্য় কোনও প্রোডাক্ট ব্য়বহার না করে অলিভ অয়েল ব্য়বহার করতে পারেন ৷ এতে ত্বকের ক্ষতি না করে মেক আপও যেমন তুলে ফেলা হবে সেই আপনার নরম ত্বক এই তেলে পুষ্টও হবে ৷ তাই তুলোতে ভার্জিন অলিভ অয়েল নিয়ে তা দিয়ে ধীরে ধীরে মেক আপ তুলে ফেলুন ৷ এছাড়া দই, মধু এবং অলিভ অয়েল-এর একটি মিশ্রণ তৈরি করে তা দিয়েই মেক আপ তুলতে পারেন ৷
ঠোঁটের যত্নে- ঠোঁট মুখমণ্ডলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ ৷ এই অলিভ অয়েল ব্যবহার করলেই আপনার ঠোঁটকে নরম এবং সুন্দর রাখতে পারবেন ৷
ঠোঁটে অলিভ অয়েল ব্য়বহারের পদ্ধতি:
এর জন্য় আপনাকে, ব্রাউন সুগার গুঁড়ো করে, তাতে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল এবং এক ফোঁটা পাতিলেবুর রস দিয়ে একটি মিশ্রম প্রথমে তৈরি করে নিতে হবে ৷
ঘুমোতে যাওয়ার আগে এই মিশ্রণটি পাঁচ মিনিট ঠোঁটে আলতো করে ঘষুন ৷
তেল যেমন আপনার ঠোঁটকে নরম করে তুলবে, তেমনই ব্রাউন সুগার এবং পাতি লেবুর স্ক্রাবার ঠোঁটকে পরিষ্কার করে সজীব করে তুলবে ৷
নরম তুলো দিয়ে ঠোঁট ধীরে ধীরে পরিষ্কার করে নিন ৷
ত্বকের সার্বিক রক্ষা- ত্বককে নানাবিধ রোগের হাত থেকে এই অলিভ অয়েল রক্ষা করে ৷
এতে থাকা ভিটামিন ই এক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে ৷
ত্বকের সার্বিক রক্ষার জন্য় একটি কাপের এক তৃতীয়াংশ দই, এক চতুর্থাংশ মধু এবং দুই চামচ অলিভ এয়েল নিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিতে হবে ৷
এবার এটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিতে হবে৷ পুরু আস্তরণ করে মুখে এই মিশ্রণ লাগাতে হবে ৷
কুড়ি মিনিট পরে হালকা গরম জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে ৷
সপ্তাহে দু দিন এইভাবে অলিভ অয়েল ব্য়বহার করলে উপকার পাবেন ৷
২. চুলের জন্য় অলিভ অয়েল-এর উপকারিতা-
ত্বকের যত্নের পাশাপাশি চুলের যত্ন নিতেও এই তেলের জুড়ি মেলা ভার ৷
চুলের বৃদ্ধিতে
শ্যাম্পু করার আগে অলিভ অয়েল হালকা গরম করে মাথায় মাসাজ করে নিন ৷ মাথা ধোওয়ার সময় হালকা গরম জল ব্য়বহার করুন ৷ এটি যেমন ময়েশ্চারাইজারের কাজ করবে তেমনই চুল পড়াও কমাবে ৷
অলিভ অয়েল মাসাজ চুলের গোড়া শক্ত করার পাশাপাশি চুলের ঔজ্জ্বল্য়ও ধরে রাখতে সহায়তা করবে ৷
তেলে থাকা ভিটামিন ই চুল পড়ে যাওয়া কমাবে এবং সেই সঙ্গে চুলের বৃদ্ধি কত দ্রুত হচ্ছে তাও আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন ৷
খুশকি নিরাময়
খুশকির সমস্যায় অনেকেই জেরবার ৷ অলিভ অয়েল-এ আরও একটি উপাদান যোগ করে তা ব্য়বহারে খুশকি দূর করা যেতে পারে ৷
কীভাবে খুশকি দূর করবেন?
অলিভ অয়েল নিয়ে তাতে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে তা দিয়ে মাথায় ও চুলের গোড়ার দিকে ভালো করে মাসাজ করতে হবে ৷
তারপর স্নান করে নিন ইষদুষ্ণ জলে ৷ নিয়ম করে এইভাবে মাসাজ করে স্নান করলে তা খুশকি ধীরে ধীরে কমিয়ে দেবে ৷
চুলের স্বাস্থ্য়
চুলের স্বাস্থ্য় ধরে রাখতে অলিভ অয়েল আরও একটি সহজভাবে ব্য়বহার করে থাকেন অনেকে ৷ এতে অলিভ অয়েল-এর সঙ্গে থাকে ডিমের কুসুম এবং মধু ৷ ডিমের প্রোটিনগত গুণাগুণ এবং মধুতে থাকা ম্য়াগনেশিয়াম, জিঙ্ক, সালফার, ক্য়ালশিয়াম, ভিটামিন বি চুলের জন্য় খুবই উপকারী ৷
প্রয়োগের পদ্ধতি
হাফ কাপ অলিভ অয়েল-এর সঙ্গে দু চামচ মধু এবং একটি ডিমের কুসুম ভালো করে মিশিয়ে নিন প্রথমে ৷
এবার তা চুলে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিতে হবে ৷
এরপর ইষদুষ্ণ জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ৷
শেষে কন্ডিশনার লাগিয়ে নিতে পারেন ৷ এভাবে চুলের স্বাস্থ্য় ভালো রাখতে পারবেন দীর্ঘদিন ৷৷
a product of #RoyalToiletriesLtd